যাবার সময় হল , শুনতে পাচ্ছ দূরে ঘণ্টা বাজছে, বেজেই চলছে...
এখনও বাকী রয়ে গেল বহু কিছু, সুপুরির ফুল গুলো এখনও
ফল হয়ে ওঠে নি, পেছনে পাচিলের গায়ের ফাটল সারানো
হয়নি আজো, একটু নজর রেখ ... সুযোগ পেলেই ঘেয়ো নেড়িটা নাহলে...
এক পশলা ভালোবাসা ঝরিয়ে, আকাশ এখন মেঘের ডানায়
ছুঁয়ে আসছে মহাজাগতিক নিল, কি খুশি , কি খুশি!
তার হাসির ছোঁয়াচ লেগে, ঝিকমিকিয়ে উঠছে ভিজে মাঠের সবুজ।
ওই দেখ নাম না জানা জাদুকর , আমার জন্যে পেতে দিয়েছে
সাতরঙা গালচে, আর কতটুকুই বা...
...জানো এই মুহুর্তে সব;
সব কিছু বড্ড বেশী ভালো লাগছে। কি এক অদ্ভুত মায়া ছড়িয়ে
যাচ্ছে ধমনী প্রবাহে, আজকের বাতাসে যেন আশ্চর্য এক ঘ্রাণ
ঠিক বোঝাতে পারব না, পারা কি ছাই নিজেও কি বুঝতে পারছি...
একবার মনে হচ্ছে রজনীগন্ধা , একবার নেবুফুল... আর বুঝেই বা করব কি?
আর তো মোটে... সে যাকগে, যেতে যখন হবেই সে কথায় আর কাজ নেই।
তার চেয়ে চল এক বার , শেষ বারের মত-ই হয়তো বা
ছুঁয়ে আসি, ভরন্ত কোপাই। ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে টা-টা করে আসি
ছুটে যাওয়া ডাউন ট্রেনের অচেনা মানুষ জনকে। ওরা তো জানে না
আসলে এ ইশারা নিজেকেই করা। শুধু তুমি সেই মুহুর্তে আর একটু
শক্ত করে চেপে ধরবে আমার মুঠি। বাকী তো সব... কি আর করা,
এই ক দিনে কজন কে আর চিনব বলো, আমাকেই বা চিনল কজন!
সমস্ত হিসেবের খাতা পুড়িয়ে এসেছি... আজ ক্যামেরাও আনিনি ।
আমার তো দরকার নেই, আর আমি জানি পৃথিবীর সমস্ত ইরেজার
মিলেও, তোমার চোখ থেকে এই সন্ধ্যার একটি বিন্দুও ফিকে করতে পারবে না।
সময় হল, আঃ যদি অন্য বিকেলের মত বলতে পারতাম, চলো এবার
ফেরা যাক। আজ প্রথম ও শেষ বারের মত বুঝলাম ফেরার আস্বাদ!
বেশ তাহলে, একবার চোখে চোখ তো রাখ ... ছি অমন করতে আছে,
একটু হাসো, লক্ষ্মীটি! সেই প্রথম দিনের মত তোমার চোখে আমি আর একবার
মানস সরোবরের শান্ত ছায়া দেখে নিতে চাই, যা দেখা মাত্রই বুকের মাঝে
ফুটে উঠে ছিল সুদুর্লভ ব্রহ্মকমলের ঝাঁক।
আর কিছুক্ষণ বাদে আকাশে অস্তরাগ ভেদ করে ভেসে আসবে শান্ত আজান
আর গম্ভীর শাঁখ। মনে করে আমার প্রদীপটাও জ্বালিয়ে দিও...
সলতে পাকিয়ে রেখে গেছি। মনে করে ভাত বেড়ে খেও... আর ওই
ঘেয়ো নেড়িটাকেও আমার দুমুঠো দিয়ে এস। অন্ততঃ ও তো বাঁচুক...
কি বল। জানি এখন তোমার দুনিয়া সাদা-কালো সেলুলয়েড... তবু বলি
ভালো থেকো, ভালোবেসো, দেখো বৃষ্টি হয়ে তোমার ধূসর আমার
সবুজে ভরে দেব। কথা দিলাম।