Translate

শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৬

ইন্ধন... ...

স্রোত-ও কখনো-সখনো দৈনন্দিন ইন্ধন বয়ে আনে..
নদীর নির্জন চরে ক্লান্ত চিতা জলে ভেসে গেলে
কোন এক নামহীন কুলে সেই সব যাপিত প্রাণের 
দহনের সহচর অর্ধদগ্ধ কিছু কাঠে... ভাঙ্গা কুঁড়েঘরে
দিনশেষে চমৎকার ভাতের আঘ্রাণ...
উদোম শিশুকে ঘরমুখো করে।

এভাবেই স্রোত 
কখনো কখনো সেতু বাঁধে ...  এক মুঠো 
অস্থি অবশেষ জুড়ে যায়  পরিত্রৃপ্ত গ্রাসে...
যে জীবন হারিয়েছে বাসা, তাই যেন ফ্যানের সুবাসে
থিতু হয়... আধো অন্ধকারে নামহীন ঝুপড়ির
আনাচে কানাচে...  

ভালোবাসা বেপরোয়া ঝাঁপ দেয়, মৃত্যু নদীর খরশান ফাঁদ
এড়িয়ে ... বারবার ... অনায়াস ফিরে ফিরে আসে...
ধুলোপায়ে, গলির গোলোক ধাঁধা ভেঙে চেনা চৌহদ্দির মাঝে, 
নুনে-ভাতে, ক্লান্ত রাতে ... প্রিয় নারীর ওম মেখে...
নিল নিঃসাড় হিমে জীবনের ইন্ধন জ্বালে...

ভূমিকম্পের প্রতি ... ...

April 25, 2015 at 3:32pm
আর একটু জোরে, বিষাক্ত শিকড়
ছড়িয়েছে অনেক গভীরে,
দু একদোলনে উৎখাত হবার নয় আজ।
হে সর্বংসহা আর কতকাল
মেনে যাবে মুখ বুজে নির্মম নির্লজ্জ
বিনাশন ... রক্ত হোরী খেলা।
দ্বীধা হও বসুমাতা, ভাঙো ভাঙো ভাঙো
প্রলয় দোলায় পুঞ্জীকৃত পাপেরপ্রাসাদ,
অন্ধ অহমিকা রাশি।
অট্টহাসে কাঁপুক ভুবন
মুক্ত কর ধ্বংস সাজে, তাণ্ডবলীলায়!
অ-সভ্যতা ভগ্ন স্তূপ উদ্ভিন্ন করে
প্রলয়ের পরবর্তী ভোরে
কোরক মেলুক দুঃসাহসী রক্তকরবী।

চরৈবেতি

তবুও বিশ্বাস...

May 17, 2014 at 12:10am
চলে যাই, চলে যেতে হয় ...অনেক সময়! 
হাতের মুঠোয় তখন নষ্ট চাঁদ গুনগুণ সুরে গেয়ে চলে
প্রপিতামহীর হারানো নক্সী কাঁথার অলীক গাথা

চলে যাই, চলে যেতে হয়... অনেক সময়
বন্ধ্যা পথ জানার পরেও, স্বপ্ন বীজ রোপণ
অনিবার্য হয়ে ওঠে

এভাবেই যেতে যেতে যেতে 
সন্ত্রস্ত সন্ধ্যার বন্ধ চোখে চোখ রেখে
পড়ে গেছি অজস্র কান্না

এভাবেই যেতে যেতে যেতে
মৃত্যুলগ্ন রাতের জঠরে নিঃশব্দ চিৎকারে
প্রতিবাদ পরিপাক হতে দেখবার পরেও 

চলে যাই, চলে যাব... অনন্ত সময়
কারন আমারই হাতে একদিন
মিলে যাবে হাজার শপথ

এভাবেই পায়ে পায়ে পায়ে
বেড়ে যাবে পথ, রক্ত-বদ্ধ গর্ভবাস শেষে
উদিত হবেই জাতক 

তাই চলি, তাই চলে যেতে হয়, তাই চলে যাব বারবার
জন্ম থেকে জন্মান্তর জুড়ে
চরৈবেতি সাধনা আমার... 

একটা বৃষ্টির কবিতা


May 27, 2014 at 11:13am
একটা বৃষ্টির কবিতাএকটা বৃষ্টির কবিতা







একটা বৃষ্টির কবিতা হয়ে যাক
ধূ–ধূ মাঠ চিরে ওঠা ইট-কাঠ-কংক্রিট
মেঘলা ক্যনভাসে হঠাৎ যখন জলছবি...

একটা বৃষ্টির কবিতা বাজুক
ঘাস ওড়নায় টলটলে মুক্তা জন্মক্ষণে
চুমুকে চুমুকে কিছু উষ্ণতা মাখা
পেয়ালা ঠোঁট ছুঁয়ে আলতো
ইশারা দিলে...

একটা বৃষ্টির কবিতা... ... ...
ফোঁটায় ফোঁটায় ছুঁয়ে দিক আমাদের
তপ্ত উঠোন! লু বাতাস স্মৃতি ভুলে
হাট করা জানালায়
ভিজে আসা শালিক যুগল
ডানার ঝাপটে একমুঠো খুশি
দশ ফুট বাই বারো ফুটে
এলোমেলো ছড়াবার পর... ...
সমস্ত গুমোট ভুলে আঙুলে-আঙুল
বৃষ্টির কবিতা এঁকে যাক!

আর্তি


May 17, 2014 at 8:21am
             

পায়ে পায়ে সরে এসে
দঁড়িয়েছি ঢেউ-এর টীলায়
আমার দিগন্ত ছুঁয়ে সূর্য ডুব দেয়
নোনা অন্ধকারে।
গাঢ়- গাঢ় – গূঢ় তমিস্রায়
শ্রান্ত চাঁদ লবণ ছড়ায় রাতভোর,
হিমঘরে নষ্টঘ্রাণ তবু।
বিষণ্ণ শব বুকে অস্পষ্ট সাগরে
খুঁজে ফিরি ফেলে আসা বটের শিকড়,
পরিচিত উষ্ণতার বাস।

সমুদ্র সময় শেষে
খসে পড়ে মাংস... ভালোবাসা...
অবশিষ্ট নির্জন কঙ্কাল
ঢেঊ ভেঙে ভেঙে ভেঙে খোঁজে সূর্যোদয়।   

প্রতিশ্রুতি...


May 15, 2014 at 11:42pm
যাবার সময় হল , শুনতে পাচ্ছ দূরে ঘণ্টা বাজছে, বেজেই চলছে...
এখনও বাকী রয়ে গেল বহু কিছু, সুপুরির ফুল গুলো এখনও
ফল হয়ে ওঠে নি, পেছনে পাচিলের গায়ের ফাটল সারানো
হয়নি আজো, একটু নজর রেখ ... সুযোগ পেলেই ঘেয়ো নেড়িটা নাহলে...

এক পশলা ভালোবাসা ঝরিয়ে, আকাশ এখন মেঘের ডানায়
ছুঁয়ে আসছে মহাজাগতিক নিল, কি খুশি , কি খুশি!
তার হাসির ছোঁয়াচ লেগে, ঝিকমিকিয়ে উঠছে ভিজে মাঠের সবুজ।
ওই দেখ নাম না জানা জাদুকর , আমার জন্যে পেতে দিয়েছে
সাতরঙা গালচে, আর কতটুকুই বা...  

                                          ...জানো এই মুহুর্তে সব;
সব কিছু বড্ড বেশী ভালো লাগছে। কি এক অদ্ভুত মায়া ছড়িয়ে
যাচ্ছে ধমনী প্রবাহে, আজকের বাতাসে যেন আশ্চর্য এক ঘ্রাণ
ঠিক বোঝাতে পারব না, পারা কি ছাই নিজেও কি বুঝতে পারছি...
একবার মনে হচ্ছে রজনীগন্ধা , একবার নেবুফুল... আর বুঝেই বা করব কি?
আর তো মোটে... সে যাকগে, যেতে যখন হবেই সে কথায় আর কাজ নেই।

তার চেয়ে চল এক বার , শেষ বারের মত-ই হয়তো বা
ছুঁয়ে আসি, ভরন্ত কোপাই। ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে টা-টা করে আসি
ছুটে যাওয়া ডাউন ট্রেনের অচেনা মানুষ জনকে। ওরা তো জানে না
আসলে এ ইশারা নিজেকেই করা। শুধু তুমি সেই মুহুর্তে আর একটু
শক্ত করে চেপে ধরবে আমার মুঠি। বাকী তো সব... কি আর করা,
এই ক দিনে কজন কে আর চিনব বলো, আমাকেই বা চিনল কজন!
সমস্ত হিসেবের খাতা পুড়িয়ে এসেছি... আজ ক্যামেরাও আনিনি ।
আমার তো দরকার নেই, আর আমি জানি পৃথিবীর সমস্ত ইরেজার
মিলেও, তোমার চোখ থেকে এই সন্ধ্যার একটি বিন্দুও ফিকে করতে পারবে না।

সময় হল, আঃ যদি অন্য বিকেলের মত বলতে পারতাম, চলো এবার
ফেরা যাক। আজ প্রথম ও শেষ বারের মত বুঝলাম ফেরার আস্বাদ!
বেশ তাহলে, একবার চোখে চোখ তো রাখ ... ছি অমন করতে আছে,
একটু হাসো, লক্ষ্মীটি! সেই প্রথম দিনের মত তোমার চোখে আমি আর একবার
মানস সরোবরের শান্ত ছায়া দেখে নিতে চাই, যা দেখা মাত্রই বুকের মাঝে
ফুটে উঠে ছিল সুদুর্লভ ব্রহ্মকমলের ঝাঁক।

আর কিছুক্ষণ বাদে আকাশে অস্তরাগ ভেদ করে ভেসে আসবে শান্ত আজান
আর গম্ভীর শাঁখ। মনে করে আমার প্রদীপটাও জ্বালিয়ে দিও...
সলতে পাকিয়ে রেখে গেছি। মনে করে ভাত বেড়ে খেও... আর ওই
ঘেয়ো নেড়িটাকেও আমার দুমুঠো দিয়ে এস। অন্ততঃ ও তো বাঁচুক...
কি বল। জানি এখন তোমার দুনিয়া সাদা-কালো সেলুলয়েড... তবু বলি
ভালো থেকো, ভালোবেসো, দেখো বৃষ্টি হয়ে তোমার ধূসর আমার
সবুজে ভরে দেব। কথা দিলাম।


...'আমায় নিয়ে যাবি কে রে 
দিন শেষের শেষ খেয়ায়'

যদি


May 31, 2014 at 10:45pm
একটা স্বপ্ন আঁকি                  
হাজার হাজার হাতে,
যদি তুমি ঠিকঠাক
তুলি এনে দিতে পারো!

একটা জীবন হাঁটি
মিছিলের পায়ে পায়ে
সামনে আশার যদি
জোনাক পাখনা মেলো।

একটা নদীর ছবি
এঁকে নেব দেশময়
মনে মন জুড়ে জুড়ে
গেঁথে রাখ যদি মালা।

একটি হৃদ-কমল
ফুটবে আকাশ ব্যেপে
ইচ্ছে ডানায় যদি
উড়ানেরা কথা কয়!

ভালোবাসো যদি তবে
নোনামাটি বাদা বনে
সবুজ ধানের শিষ
দুলবে কবিতা হয়ে...

অন্ধ পথে আজও
বিশ্বাসে হাত যদি
বাড়াও দেখবে তবে
উষ্ণতা যাবে ছুঁয়ে!

নিশ্চয়তার কাঁথা
ছুড়ে ফেলে যদি পথে
একবার নেমে চাও
পিছুটান মোছা চোখে

দেখবে ভবিষ্যৎ
অধীর প্রহর গুনে
অপেক্ষা করে আছে
শুধু আমাদের তরে।।

আষাঢ় - স্মৃতি


এমন করে ঝরলে পরে মন মাতাল,স্বভাবতই টলোমলো
প্রান্তিক প্রান্তর পেরিয়ে আরও দূর তালতোড় গাঁয়ে...
গাঁয়ের কিনারে হেঁটে যায়। যেখানে কোপাই নীচে,
উপরে ঝমঝম রেল, দু হাত দূর দিয়ে ছুঁতে যায়
নিশ্চিন্তিপুর ...

বহুদিন দহনের পর অকস্মাৎ, মেঘলা গানে গানে
আজকে যেমন বিকেল মায়াবী জলছবি, বাতাসে স্নানের ঘ্রাণ,
এসব মূহূর্তি শিশিরের মত লহমার, তবু জানি গতানুগতিক
অন্ধকারে এলোমেলো এক-আধ পশলা জোনাকের ঝাড়বাতি
জীবনের আলপনা আঁকে ...

মনে পড়ে প্রথম আষাঢ়!

অমোঘ বৃষ্টি


June 18, 2014 at 5:39pm
অনেক দিনের পরে আবার আমার আকাশ জুড়ে অঝোর
বৃষ্টি এলে
জীর্ন ধুসর পথ ভাসিয়ে  রাঙ্গা স্রোতের খেলার ছলে
বৃষ্টি এলে
ভাঙ্গা চালের ফাঁক-ফোঁকরে, ফাটা মাটির ভাঁজে নরম
ছোঁয়ার মত,
একলা দুপুর দাহ ঢেকে প্রিয় আঁচল গন্ধ মেখে
তোমার আসা
বৃষ্টি আমার...
পায়ের তালে শিউরে ওঠে, আমূল স্নাত যূথির কলি
ঝাউয়ের খোঁপা সেজে ওঠে জল-মাণিকে তুমি ছুঁলে
দগ্ধ প্রাণে সোহাগ ঢেলে যুগান্তরের পারে মাতাল
বৃষ্টি এলে...
ভিজলো হৃদয় ফুটিফাটা, ধারা স্নানে হিসেব খাতার
যাপন গণিত ধুয়ে মুছে, এলো চুলের ঢালে ঢালে উতল প্রথম
প্রেমের মত
বৃষ্টি এলে...
গলছে আমার দেওয়াল গণ্ডি, ভাসছে চেনা ছক,
রোজনামচার পাতা এবার খেয়াল নৌকো হোক!
দাঁড়ি মাঝি চাই না যে আর, বে-হাল চলার নেশায় সওয়ার
ডুবব জেনে পাড়ি এবার শিকল খোলা চেনা দুয়ার
পেরিয়ে ভেজা আঙুল ছোঁয়া দুরুদুরু বুকে পাগল
বৃষ্টি ঢেলে...
রামগিরির বার্তা মেঘে, জীবনভোরের কান্না সুখে,
আপন প্রেমে দ্রব করে আমায় নিলে,
মধ্যদিনের তপ্ত বুকে, ছায়াময়ী সন্ধ্যা এঁকে
সকল চাওয়া মিটিয়ে,
আদিম বৃষ্টি এলে!

শান্তিনিকেতনের ডাক...


June 21, 2014 at 10:04am
আষাঢ় মেঘ ঢেকেছে রৌদ্র মাঠ
সোনাঝুরি চল তুমুল ভিজব বলে
দেখবি কেমন রাঙ্গা নদী বয়
শালবনে পথ ভুলে।

ঝমঝম তালে এক ছুটে প্রান্তিক
ওভারব্রিজের নিচে ঝাপসা রেল
সময় খাতার হিসেব ভাসিয়ে আয়
ভাগ করেনি মায়াবি এক বিকেল!

জল ছপছপ গোয়ালপাড়ার পথে
কোপাই সেতুর পারে এসে চুপচাপ
দেখ ঘোলা জল বইছে নিজের চালে
অসময় স্রোতে সবুজ ভাসিয়ে বুকে!

চুপচুপে সাঁঝে আশ্রম মাঠ ঘেঁষে
দেখি চ কেমন খুশিতে ঘাসেরা আজ
মেঘলা সাজে মাতোয়ারা গান গায়
শুনতে জানলে ভোলা যায় সব কাজ!

আবছা আঁধার ঘণ্টা তলার বেদী
অঝোর ধারায় গলে গলে পড়ে মন
অনাড়ম্বর শান্তির নিকেতন
দেখতে পাবি এখন আসিস যদি।

সবুজ বিশ্বাস ...


June 23, 2014 at 1:27am
তুমি এমনি করে আগুন হয়ে, 
জ্বালিয়ে যাও আকাশ-জীবন
আমার আবাদ পুড়ে ফুটিফাটা

অন্যমনে বুনে রাখা
সবুজ মনের গালচে জুড়ে
বেড়ে ওঠে অসংখ্য চোরকাঁটা...

ফসল কোথায় ধূ-ধূ যাপন
তোমার - আমার মধ্য-স্রোতে
ছড়িয়ে আছে দীর্ঘ বালুচর

সেই যে নদী স্বপ্ন মাখা
পথ ভুলে আজ দিশাহারা 
ভস্ম-ছাই ওর-ও বাড়িঘর...

বাতাসে বিষ জ্বলে পাঁজর
তারও পরে কণ্ঠ চিরে
উৎসারিত গানের তালে তালে

মেঘ জমবে হৃদ-কমলে
ফোঁটায় ফোঁটায় ভালোবাসা
ফুল হয়ে হাসবে মরা ডালে! 

সবুজ বেশ্বাস

যারা হাতে হাত রেখে প্রতিশ্রুতি এঁকেছিল
পায়ে পায়ে পাড়ি দেবে স্বপ্ন ছায়াপথ,
শত মন্বন্ত্বর চোখে চোখে বয়ে যাবে
অপলক ভালোবাসা বুনে...
যারা চড়াইয়ের মত কুটো-খড় ঘাস
জড়ো করে দিন-রাত ভোর
নির্মাণ করে ছিল সম্ভবনা ময়
একান্ত নীড় এক...


বিধ্বস্ত দিনের শেষে বেঁচে থাকা দু-মুঠো সময়,
যারা ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বিনিময় করেছে উত্তাপ!
রোদ-ঝড়-বিদ্যুতে-কুয়াশায়-শীতে
যারা যুগ-যুগান্তর হিয়ে হিয়ে মিশে একাকার
উত্তাল জীবন স্রোতে রেখে গেল উত্তরাধিকার...


পাশাপাশি বেড়ে ওঠা লতাদের মত আঁকড়ে বাঁচবার পরও
মুখোমুখি বালিশের মাঝে কখনো কি
অচেনা বাতাস ফিসফিস স্বরে অমোঘ যন্ত্রণা্ময়
প্রশ্নচিহ্ন ছুড়ে গেছে ????
রোজকার আয়নার এপারে-ওপারে
কাছাকাছি তবু বহু দূরে
বাস করা মানবের, মানবীর মত
তারাও কি বাস্তবিক চেনে পরস্পরে?

মনখারাপের রাতকথা


মন-খারাপের ঘরবাড়ি জুড়ে রাত
আঁকে সংশয়, জ্বলে পুড়ে ছাই সুখ,
ঘুর্ণি হাওয়ায় দোদুল্যমান বুক
এপাশে কান্না আঁকড়ে ধরছে হাত
পরপারে তার নিশ্চুপ বিমুখতা!


চেনা মুখ সব জলপর্দার নিচে
মুখোশের  ভিড়ে দিকহারা
ব্যথাতুর। খেয়ালী ধারায়
একাকার মন-মাঠ
পাঁজরের ভাজে ভাসে ভাসানের সুর !


বাইরে অঝোর ভিতরে 
উথাল-পাথাল, ঝড়ে
ভেঙে যায় ভরসার
কড়িকাঠ! এক সমুদ্র
কান্না গেলার পরও
নিঃশ্বাসময় তীব্র লবণ-স্বাদ!


... যাবো কোন পথে???
কোথায় সাগর পারে
দারুচিনি দ্বীপ অনন্ত কথকতা
বুকে নিয়ে আজো আমারই
প্রত্যাশে, গুণছে প্রহর
প্রতীক্ষা ভারাতুর! 

হে প্রেম আমার!


                                 
আজ  
হৃদয়ের শব্দ শুনছ চুপ!

হে প্রেম আমার
স্তব্ধ রাতের বুকে
জীবনভোরের অনিশ্চয়তা লেখা!

তবুও আকাশে জ্বালাই 
অনির্বাণ, বিশ্বাস এক 
স্নিগ্ধ, দীপ্ত, ধীর!

সেই আলো যুগ যুগান্তরের পটে 
ইশারা আঁকে  
ভাস্বর হৃদয়ের
তুমি আর আমি জানি
তার ইতিকথা!

ওরা তার নাম রেখে গেছে
ধ্রুবতারা!

জীবনমুখী...



‘অদ্ভূত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ’ বাতাসে সংশয় বিষ
প্রলম্বিত ছায়া-গ্রাসে প্রতিবিম্বে অ-চেনা মুখোশ...
আমার বুকের মাঝে কথা বলে অন্য মন, আনমনা পথে হেঁটে যায়
ত্বরায়িত অস্তাচলে জলাঞ্জলি দু-মুঠো সময়...
যেমন কুয়াশা ভেজা ঝরাপাতা ঘাটে কিংবা আঘাটায়,
উড়ে চলে রাতভোর অকরুণ হিমে!

একদিন ভালোবাসা  দু-চোখে রঙিন প্রজাপতি
ডানা ঝাপটাতো, খোলা সেতু নিরালা বাতাসে
মিশে যেত খ্যাপা বাউলের মরমিয়া গান...
সাক্ষী ছিলি তুই চাঁদ, তোর ছায়া ধোয়া স্রোত... ঘর মুখো
কিছু সাইকেল।

কোপাইয়ের হাঁটু জলে তখনও সবুজ খুন মেশেনিকো
এলোমেলো মনেদের ঝাঁকে শেষ বিকেলের মায়া মেখে,
তখনও সোনালি আলো, সোনাঝুরি বনে অপরূপা সাজে
আধাঁরের চুনরি জড়াতো... বল্গাহীন সুরের ঝরণা বেজে যেত
খোয়াই পাড়ায়।

এসবই ভগ্ন স্মৃতি ...দু মুঠোয় ত্রস্ত-বিপর্যয়,
স্বপ্নের অলিন্দ বেয়ে রক্তস্নাত দুঃস্বপন
মারে উঁকিঝুকি!
তবু হার না মানার জিদ, কান্না গিলে হাঁটতে শেখায়...
পা যখন বাড়িয়েছি, চৌকাঠ মাড়িয়েছি  দিক-রেখা করে যাব পার।

নষ্ট মেঘে ক্ষয়ে গেছে দিন,  
আয় চাঁদ মৃত রাতে, ঘুমন্ত পথে মাঠে জীবনের কবিতা ছড়াই!

বিষাদ


December 15, 2014 at 2:23pm
আমার নির্জন দ্বীপে শীত নামে,
জলের কিনারে জমে পরিযায়ী ভিড়!

অচেনার কলরবে, ডানার ঝাপটে
মনে পড়ে ফিরবার কথা ছিল যার, ফেরে নাই যারা...
সেই সব প্রিয় বাস- চেনা শব্দ- সান্নিধ্যের ওম
প্রয়োজন ফুরালেই হৃদয় চড়ায়
ঘূর্ণি বাতাসে পাক খায় ভাঙ্গা কাঠ-কুটো
একদা যা প্রতিশ্রুত 
একান্ত আবাস নির্মাণে
উত্তরে দমকে ঝর ঝর
উড়ে যায় হলদে আশ্বাস!

মেঘ মেদুর, বৃষ্টি মাখা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর প্রহর
আরোও শীতার্ত হয়
অসহায় একাকীত্বে!

হাড়িতে চাপানো চালে-ডালে,
আগুনের ছোঁয়াচ পেতেই
মিলনের সুবাস ছড়ায়!

বুকের আনাচে-কানাচে চাপ বাঁধে নিঃসঙ্গতা
ঘন  থেকে ... ঘনতর... শ্বাসরোধী কুয়াশার মত!
মূক আর্তনাদে নীল হয়ে চলা আঙ্গুলের অধীর ইংগিতে 
আরও জোরে বেজে উঠে বোকাবাক্স গান গায়, হাসে-কাঁদে...
...সমস্ত ধ্বনি অর্থহীন!
রুদ্ধশ্বাস দ্রুততায় সাঙ্গ হওয়া, কাহিনির শেষে
মনে পড়ে না কোন চরিত্রের নাম... ... ... 
... সমস্ত অক্ষর নির্দিষ্ট সংকেত হারিয়ে
প্রহেলিকা হয়ে ওঠে!

আজ নয় শুধু,
ইতিপূর্বে অগনিত বার
এভাবেই বিচ্ছিন্ন-চোরা স্রোতে
মূল্যহীন অপচিত বর্জ রাশির খাত বেয়ে
বয়ে গেছে অনন্ত সময়!


কখনও জেনেছ কি
অকস্মাৎ বন্যার মতই
একাকীত্বে ধুয়ে গেলে মাটি
শূন্য গর্ভে দোল খায় ক্লান্ত সত্ত্বা এক
রিক্ত জীবন আর নিঃস্ব মৃত্যু-র মাঝামাঝি!


এমনই দোলাচলে ধ্বস নামে
পথের কিনারা থেকে খাদের গভীরে
ছিন্নমূল মহীরুহ
অনেক  অনুক্ত কথা নিয়ে,
এ জন্মের মত শীত ঘুম দিতে চলে!

একদিন আমিও ঘুমোব
সমস্ত ব্যথা, অশ্রুর কষাটে-লোনা স্বাদ,
আপেক্ষায় অপেক্ষায় নিরুত্তাপ
বিস্বাদ যাপন পিছে ফেলে...
অভিমানী মেঘ হয়ে...
ভেঙে পড়া গাছেদের পাশে!

নিঃসঙ্গতা



মাঠ ভেঙে এগিয়ে আসছে শাপলা বরণ সাঁঝ
আরো কয়েক যুগান্তর নির্জন শীত রাত্রি
আমার ঊঠোনে টুপ্টাপ এঁকে যাবে হিমেল
বেদনা। তবুও বুকের কানাচে পিদ্দিম জ্বালাই
ভালোবাসা। মেদুর স্বপ্নের পায়ে পায়ে ওৎ পেতে
চলে অন্ধকার। রোজনাচার ছক জুড়ে ইতি আর নেতি
দুই জনা খেলে চলে জটিল গণিত। 
অভ্যাস ভুলে কিছুদিন, দুমুঠো হৃদয় ঢেলে দেব
ফুটন্ত হাঁড়িতে। সম্বরার কৌটো-বাটা ঘেঁটে
কোন একদিন একলা চলার স্বাদ ফেন ভাতে মেখে, ঃদি
আমিও নিয্যস খুঁজে নেব সমুদ্র সকাল।

শিলাবৃষ্টি


একাকীত্ব  জমে জমেএকটা  গোটা  মেঘ
যে একদিন স্বপ্ন দেখেছিল
সারাদিন অঝোর স্নানের পর
ঘাসেরা জড়াজড়ি,
ভেজা বুকের সোঁদা ঘ্রাণ
বুনো লতার বাঁধন খসে
টুপটাপ জমে থাকা ভালোবাসা
নতমুখি সূর্যমুখিতে উড়ে আসা
প্রজাপতি, রামধনু আঁকা আকাশ
আর খোয়াইয়ের জলছবি জুড়ে
ছুটে চলা আদিবাসী শৈশব।  
কোপাইয়ের ঘোলা আয়নায়
কনে দেখা আলোয় আশ্চর্য উদ্ভাস,
প্রান্তিকের প্রান্তর  পেরিয়ে
বহুযত্নে গড়ে তোলা সম্পর্কের কথকতা,
কথা মাত্র নয় অরূপকথার ঘরবাড়ি,
ভিজে হাওয়ার রাতে কবিতা-গজল
নরম মোমের গলে পড়া
নতুন চুলোয় হাড়িকুড়ি 
আতপ-খিচুড়ি বাস , একটি থালায় দুটি হাত
.... .... ইত্যাকার অলীকআশায়,
অপেক্ষায় অপেক্ষায়  আর অপেক্ষায়
আজকে পাথর মাত্র হিম।

দিনান্তে নিঃসঙ্গ প্রান্তরে নিরুত্তাপ শিলাবৃষ্টি ঝরে ... ...